google-site-verification=HlOR-ZCniyXbn_KC4fk676X6tF0kae_VCQab5EIitGY ঋণের টাকায় বাবার কেনা ভ্যান হারিয়ে কান্নায় ভাসছে দীপ্ত

Header Ads Widget

ঋণের টাকায় বাবার কেনা ভ্যান হারিয়ে কান্নায় ভাসছে দীপ্ত



অভাবের সংসার। ভ্যানচালক বাবার উপার্জনে কোনো রকমে চলে পাঁচ সদস্যের পরিবার। স্কুলে গেলেও বড় ছেলে ১৪ বছরের দীপ্ত মৃধাকে মাঝেমধ্যেই ভ্যানে যাত্রী পরিবহনের কাজ করতে হয়। বাবাকে সহযোগিতা করতে হাসিমুখেই সেই কাজ করে দীপ্ত।

স্কুল বন্ধ থাকায় সোমবার সকালে দীপ্ত তার বাবার ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিল যাত্রী পরিবহনে। পরে যাত্রীবেশে ভ্যানে ওঠা চোর কৌশলে তার ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়।

ভ্যান হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই কাঁদতে থাকে কিশোর দীপ্ত।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকায় কিশোর দীপ্তর সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। তার কান্নাকাটি দেখে রাস্তার পাশে অনেকেই জটলা করেছিলেন।

ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে জানতে চাইলে দীপ্ত জানায়, সে ভ্যানে যাত্রী নিয়ে কচুয়া থেকে বাগেরহাট এসেছিল। সেই যাত্রীরাই তার ভ্যানটি নিয়ে পালিয়েছে।

দীপ্তর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের ছোট আন্ধারমানিক গ্রামে। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় দীপ্ত মৃধা স্থানীয় আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

কাঁদতে কাঁদতে দীপ্ত নিউজবাংলাকে বলে, ‘সকালে বাড়ির সামনে থেকে দুই যাত্রী নিয়ে কচুয়া বাজারে আসি। সেখানে এক যাত্রী নেমে গেলেও অন্যজন আমাকে সাইনবোর্ড বাজারে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আরও এক যাত্রী ওঠে। তারা আমাকে জোর করে বাগেরহাট নিয়ে আসে।

‘আমি এদিকে আসতে চাইছিলাম না। কিন্তু মাল নেবে বলে আমাকে জোর করে। তারা আমাকে বলে, আমি তোমার বাবাকে চিনি। এই কথা বলে জোর করে নিয়ে আইছে।’

দীপ্ত আরও বলে, ‘বাগেরহাট শহরের মধ্যে ঘুরে তারা পাইপ নেবে বলে প্রথমে এক দোকানের সামনে দাঁড়ায়। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে মিঠাপুকুর পাড় আসে। সেখানে দাঁড়াতে বলে তারা ভ্যানে বসেই আমাকে পান নিয়ে আসতে বলে। আমি ভ্যানে তালা দিয়ে গেলেও পান কিনে এসে দেখি ভ্যান নেই।

‘তারপর আমি সব দিকে দৌড়াইছি। কিন্তু ওই লোকদের কোথাও পাই না, ভ্যানও পাই না।’ কথা বলতে বলতেই কাঁদতে থাকে দীপ্ত।

দীপ্ত জানায়, দুই বছর আগেও তার বাবার একটি ভ্যান চুরি হয়। বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে চুরি যাওয়া সেই ভ্যানটিও আর পাওয়া যায়নি। তারপর অনেক কষ্টে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই ভ্যানটি কিনেছিল তারা। এই ভ্যানটাও চুরি হয়ে গেল।

মিঠাপুকুর পাড় এলাকার একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী তারক বৈরাগী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেটারে দেহি কানতি কানতি এইখানে এইসে দিয়ালের সাথে মাথা টাহাতিছে। এর আরে ভ্যান গেল কয়ে কানতি কানতি দৌড়তিল। পরে আমরা ডাইকে ওর কাছতে নাম্বার নিয়ে ওর বাবারে ফোন করছি।’

খবর পেয়ে দীপ্তর বাবা দীপঙ্কর মৃধা দুপুরে বাগেরহাটে এসে সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই চোর চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

এর আগে গত ১৫ জুন বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একইভাবে একটি ইজিবাইক চুরি হয়। যাত্রীবেশে চোর চক্র চালক আবু বক্কর আয়াজকে অচেতন করে তার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকটি নিয়ে যায়।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা এলাকার আয়াজ ঘটনার মাত্র এক মাস আগে নিজেদের গরু বিক্রির টাকা এবং ধারদেনা করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি কেনেন।

আক্ষেপ করে আয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গাড়ি কেনার ২২ হাজার টাকা এখনও বাকি। পরিশোধ করতে হবে। কোথায় টাকা পাব? এই গাড়ির আয় দিয়ে পরিবার চলত। এখন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ নেই।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত